মোঃজিল্লুর রহমান চারঘাট (রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
রাওথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন একমাত্র শিক্ষক মেরিনা খাতুন। বিদ্যালয়টির নাম রাওথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রাওথা গ্রামে অবস্থিত। এই স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে ১৭৭ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান। এতে শিক্ষার গুণগতমান অর্জন তো দূরের কথা, নামমাত্র শিক্ষাও পাচ্ছে না এখানকার শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষা সংকটে পড়ছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সরোজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভবনটি খুব সুন্দর। শ্রেণি কক্ষগুলো নানা রকম ছবি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে প্রতিটি কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে সবই আছে, শুধু নেই একের অধিক শিক্ষক।
এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পাঁচটি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র দুজন। তার মধ্যে আবার একজন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘদিন ছুটিতে আছেন। মেরিনা খাতুন দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধানের কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি স্কুল ঝাড়ু দেওয়া, দরজা, জানালা খোলা, পতাকা ওঠানো সব দায়িত্ব একাই পালন করছেন।
মহামারি করোনায় বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি করোনা কাটিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেরিনা খাতুনকে সব দায়িত্ব পালন হচ্ছে। এই বিদ্যালয়ে নেই কোন দপ্তরি বা পিয়ন। ফলে সব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন তিনি।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেরিনা খাতুন বলেন, ‘২০২০ সালের ৩ অক্টোবরে শিক্ষক হাসান আলী অবসর গ্রহণ করেন। এরপর বিদ্যালয়টিতে দায়িত্ব পালন করেন মাত্র দুজন শিক্ষক। সড়ক দুর্ঘটনায় সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম আহত হলে সব দায়িত্ব এসে পড়ে আমার ওপর।’
মেরিনা খাতুন আরও বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকায় প্রায়ই তাঁকে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। তখন স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। শিক্ষক না থাকায় অভিভাবকেরা সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চান না। ফলে কমতে শুরু করেছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।’
এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির রাহুল, মুস্তাকিন ও মহাইমেনুলসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষক না থাকায় তাদের ক্লাস ঠিকমতো হয় না। নতুন শিক্ষক নেওয়া হলে তাঁদের লেখাপড়া আরও ভালো হতো।’
বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। একজন মাত্র শিক্ষক দিয়েই চলে বিদ্যালয়টির পাঠদান। এর মধ্যে উপজেলা সদরে সভা হলেই বিদ্যালয় বন্ধ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককেই ছুটে যেতে হয় উপজেলা সদরে। ফলে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংকট রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এরই মধ্যে তিনজন শিক্ষক অবসর গ্রহণ করেছেন। বাকি দুজনের মধ্যে একজন প্যারালাইজ হয়ে আছেন। তাই একজন শিক্ষক সব দায়িত্ব পালন করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক এনে হলেও সমস্যার সমাধান করা হবে।’
Leave a Reply